বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার, বিরোধী দলসহ সব পক্ষকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে এমন জল্পনা-কল্পনা কয়েক দিন থেকেই চলছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ওয়াশিংটনে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় যে বা যাঁরা বাধা দেবেন তাঁদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
সরকারি দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ সবার জন্য এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে।
অ্যান্টনি ব্লিনকেন টুইট বার্তায় বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি প্রসঙ্গে বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উত্সাহিত করতে তিনি ওই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন।
এই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার জন্য দায়ী বা সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময়ে এই ভিসা নীতি ঘোষণা করল যখন আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এর আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
গত দেড় বছরে র্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায় ফের নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন ওঠে কয়েক দিন আগে। তবে এবার নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হুঁশিয়ারি সব পক্ষের জন্যই প্রযোজ্য।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু গত বুধবার রাতে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন ভিসা নীতি সরকার এবং বিরোধী দল সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, সামনের নির্বাচনে যদি যুক্তরাষ্ট্র দেখে যে বিরোধী দলের কেউ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছেন বা ভোটারদের ভয় দেখিয়েছেন, তাহলে সেই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না।
একইভাবে যদি তারা দেখে যে সরকারের বা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কেউ ভোটারদের ভয় দেখিয়েছেন অথবা সহিংসতায় জড়ান অথবা বাকস্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য করেন, তবে সেই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। ডোনাল্ড লু স্পষ্ট করেই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কাউকে স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার বিচলিত নয়। কারণ সরকার নিজেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। ভিসা নীতির বিষয়ে এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে অনেক সচেতন।
এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এই নীতির কারণে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সহিংসতা থেকে দূরে থাকবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেই বিবেচনায় নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক আয়োজনে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সত্তার হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ ও মোকাবেলার জন্য সরকারি কাঠামো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এটা ধারণা করা যেতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র নানা ধরনের চাপের মুখে বাংলাদেশ নিয়ে মাঝামাঝি একটা অবস্থান নিয়েছে। তারা বিরোধীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেনি। আবার সরকারকেও ফেলে দেয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, নির্বাচন এলেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। রাজনৈতিক মতপার্থক্য প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বহির্বিশ্বে নেতিবাচক বার্তা যায়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের এই হুঁশিয়ারি সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষকে সচেতন করা। আমরা তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি। সম্পাদকীয়-কালেরকণ্ঠ