টাকা আত্মসাতের পর নিষ্ক্রিয় কেসিসি কর্মচারী ইউনিয়ন!

আত্মসাত-নিষ্ক্রিয়-কেসিসি-ইউনিয়ন

পৌণে চারবছরেও আদায় হয়নি টাকা

অপরাধ ডেস্ক : খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কর্মচারী কল্যাণ তহবিল থেকে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে অনেক আগে। ২০১৯ সালের অডিট প্রতিবেদনে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সামনে আসে।

হিসাব নিরীক্ষার প্রতিবেদনে তিনজনকে দায়ী করে অর্থ আদায়ে সুপারিশও করা হয়। অথচ ৩ বছর ৮ মাসেও আত্মসাতের ৪০ লাখ ২০ হাজার ৩৪৬ টাকা আদায় হয়নি।

তবে কেসিসির একতা দলের নেতারা বলছে, দায়ীরা অর্থ ফেরতে গড়িমসি করছেন। তাই টাকা আদায়ে সব কর্মচারীদের নিয়ে শিগগিরই আন্দোলন যাবেন তারা।

ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল অডিট হয়।

অডিট করেন করপোরেশনের বাজেট কাম অ্যাকাউন্টস অফিসার এম এম হাফিজুর রহমান, সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অডিট) মুহাম্মদ ইমরান হোসেন, হিসাব রক্ষক রওশান আরা খাতুন এবং সহকারী হিসাব রক্ষক শেখ আসলাম হোসেন।

২০১৯ সালের অডিট প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেন, রেজিস্টার ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট যাচাইকালে দেখা যায় তহবিলের ৩৩৬ সদস্য রয়েছে। এসব সদস্যদের শেয়ারের পরিমাণ ৪ লাখ ২১ হাজার ৩৬৫টি। রেজিস্টার অনুসারে শেয়ার মূল্য ১০ টাকা। সে ক্ষেত্রে মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ লাখ ১৩ হাজার ৬৫০ টাকা। কিন্তু ওই টাকা বিনিয়োগ বা গচ্ছিত থাকার প্রমাণক রেজিস্টার বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট নেই।

এ ছাড়া কল্যাণ তহবিলের ২০১৯ সালের শেয়ার, ঋণ ও লভ্যাংশ যাচাই করে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার হোল্ডারদের ঋণ দেওয়া হয়েছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৩০০ টাকা। পরবর্তী এক বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার হোল্ডারদের ঋণ দেওয়া হয়েছিল ২ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।

ওই সময়ে শেয়ার হোল্ডারদের কাছে ঋণ বাবদ অনাদায়ি ছিল ৮৫ হাজার ৭০০ টাকা। কর্মচারী ইউনিয়নের কল্যাণ তহবিলের ব্যাংক হিসাবে সর্বশেষ স্থিতির পরিমাণ ৭ হাজার ৬০৪ টাকা। অতএব কল্যাণ তহবিলে মূলধনের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৩০৪ টাকা।

নিরীক্ষা দৃষ্টিতে কল্যাণ তহবিলের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৪১ লাখ ২০ হাজার ৩৪৬ টাকা। তবে নিরীক্ষায় আরও উল্লেখ করা হয় ২০১৯ সালে কর্মচারীরা নগদ টাকায় নতুন শেয়ার ক্রয়কারীদের নাম রেজিস্টারে উল্লেখ নেই।

অডিট সুপারিশ : কর্মচারী ইউনিয়নের যাবতীয় আর্থিক কর্মকা- কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জ্বল কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন হোসেন, এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. সাইফুর রহমান সম্পাদিত হয়।

বিধায় কল্যাণ তহবিলের ৪১ লাখ ২০ হাজার ৩৪৬ টাকা মূলধন ঘাটতির জন্য তিন ব্যক্তি দায়ী বলে অডিট মনে করে। তাই ওই টাকা আদায়ের জন্য সুপারিশ করে অডিট কমিটি।

করপোরেশনের সাধারণ কর্মচারীরা জানান, বেতন থেকে অর্থ বাঁচিয়ে তারা শেয়ার কিনেছেন। অথচ সেই টাকা কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা আত্মসাৎ করেছেন। এখন জমাকৃত টাকা কোনোভাবেই ফেরত দিচ্ছেন না। এই টাকা ফেরত পেলে তারা পরিবার ও সন্তানের লেখাপড়ায় খরচ করতে পারতেন।

কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি এবং কেসিসির একতা দলের নেতা মো. শামিমুর রহমান শামীম বলেন, কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জ্বল কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ মো. সাইফুর রহমানকে দায়ী করে তাদের আত্মসাৎকৃত টাকা কোষাগারে ফেরত দিতে বলা হয়।

অথচ দীর্ঘ সময়েও টাকা ফেরত দেননি। টাকা ফেরত নিয়ে তারা নানা তালবাহানা করছেন। তবে করপোরেশনে মেয়র দায়িত্ব পাওয়ার আগে দায়ী ব্যক্তিরা কোষাগারে টাকা জমা না দিলে সব কর্মচারীদের নিয়ে শিগগিরই আন্দোলন করবেন।

তিনি অভিযোগ করেন, টাকা আত্মসাতের পর কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। কোনো সদস্যের চাঁদা গ্রহণ করা হয় না। এ ছাড়া কল্যাণ তহবিলের কার্যক্রমও এখন আর নেই।

করপোরেশনের সচিব (উপ-সচিব) মো. আজমুল হক বলেন, ২০১৯ সালের অডিটে ৪০ লাখ ২০ হাজার ৩৪৬ টাকা আত্মসাৎ ধরা পড়ে। পরে তারা অস্বীকার করলে পুনরায় অডিট করা হয়। সেই অডিটে ৩৮ লাখ টাকার কিছু বেশি অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি আসে।

সর্বশেষ কিছুদিন আগে কোষাধ্যক্ষ মো. সাইফুর রহমান ফের আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সেই চিঠির কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। সূত্র : দেশ রুপান্তর

ডিখ/প্রিন্স