মহালয়ায় সংঘাতের আশঙ্কা,মেধসাশ্রম ঘিরে পাহারা!

মহালয়া-আশঙ্কা-মেধসাশ্রম-পাহারা

বোয়ালখালী প্রতিনিধি : গত বছর মহালয়ার দিন বোয়ালখালী উপজেলার চণ্ডী তীর্থ মেধস মুনির আশ্রমের যজ্ঞে পানি ঢেলে দেওয়া ও উপস্থিত সাধুদের মারধরসহ অশ্লীল আচরণ ওঠে আনোয়ারা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেন্দু নেতা অসীম দেবের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন, সাধু-সন্ন্যাসী ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন।

মেধস আশ্রমের এবারের আয়োজনে যাতে অসীম দেব ও শ্যামল পালিত প্রবেশ না করেন তার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।

মহালয়ার দিন প্রতিবছরের ন্যায় চণ্ডী যজ্ঞের আয়োজন করেছেন শ্রী শ্রী অদৈতানন্দ ঋষিমঠ ও মিশন। একই স্থানে আলোচনার সভার ডাক দিয়েছেন অসীম দেব। এতে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের অসীম দেব বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। তবে সার্বিক বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক।

এদিকে সাধু-সন্ন্যাসীদের ওপর হামলাকারীদের মেধস আশ্রমে প্রবেশ করতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে মেধস আশ্রম ঘিরে পাহারা বসিয়েছেন স্থানীয়রা।

শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে মেধস মুনি আশ্রম ঘিরে পাহারা বসিয়েছে স্থানীয় হিন্দুরা। মধ্যরাতেও অন্তত ৩শ লোককে মন্দিরের নিচে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

এর আগে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা মেধস মুনি আশ্রমে আগের মতো অনুষ্ঠান করতে ডেকোরেশন জিনিসপত্র পাঠায় ট্রাকে করে। তবে ডেকোরেশন সামগ্রী নিয়ে আসা ট্রাকটি বাধার মুখে পড়ে সন্ধ্যায় মন্দিরের সামনে থেকে ফিরে যায়।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত ও সাধারণ সম্পাদক অসীম দেব অবৈধভাবে অনুষ্ঠানে অনুপ্রবেশ করলে তা কঠোরভাবে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা গতবারের যজ্ঞপণ্ডকারীদের মেধস আশ্রমে যেতে দিতে চান না

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের বোয়ালখালীর আমুচিয়া ইউনিয়ন শাখা কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের কাছে স্থানীয় হিন্দু সমাজ ইতিমধ্যে স্মারকলিপি দিয়েছে। অসীম ও শ্যামল পালিতের এসব তামাশা বোয়ালখালীর হিন্দু সমাজ মেনে নেবে না।

তিনি আরও বলেন, মেধস মুনি আশ্রমে তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হিন্দু সমাজ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য ও নৈতিক দাবি আমরা ইতিমধ্যেই প্রশাসনকে জানিয়েছি। এরপরও যদি অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন, তাহলে যেকোনো ধরণের পরিস্থিতির জন্য তাঁরাই দায়ী থাকবেন।

স্থানীয় হিন্দু সংগঠনের একাধিক নেতা জানান, প্রতিবছর দুর্গাপূজা এলেই হঠাৎ জেগে ওঠে তারা। শহর থেকে গায়িকা এনে গান গাওয়া কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান না। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের তো এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

গতবছর মন্দিরে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ও আনোয়ারা ৭ নম্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসিম কুমার দেব আশ্রমের সাধু-সন্ন্যাসীদের মারধর করেছিল।

প্রশ্ন উঠেছে, কী স্বার্থে তারা এখানে অনুপ্রবেশ করছে। আমরা স্থানীয়রা কি মরে গেছি? এবার এ ধরনের কেউ অনুপ্রবেশ করলে সম্মান নিয়ে মন্দির থেকে ফিরতে পারবে না। জীবনের বিনিময়ে হলেও এবার অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধ করা হবে।

দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল হিসেবে স্বীকৃত মেধস মুনি আশ্রমে এবারও মহালয়ার আয়োজন থাকবে। তবে মহালয়ার আয়োজন ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরির পেছনে এবারও জেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন আশ্রমের মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী বুলবুলানন্দ।

তিনি বলেন, মেধস মুনির আশ্রমে মহালয়ার দিন যজ্ঞসহ শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। ভক্ত হিসেবে যেকেউই আসতে পারবে। তবে এখানে কাউকে অশাস্ত্রীয় কার্যকলাপ করতে দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি শ্যামল পালিত বলেন, আমরা গত ৩০ বছর ধরে এ আশ্রমে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছি, এবারও আমাদের আয়োজন থাকবে।

গত বছরের মতো এবারও মহালয়ার দিন এ আশ্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে— এমন আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি ‘ব্যস্ত আছি’ বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ও আনোয়ারার ৭ নম্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসিম কুমার দেবকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বিষয়টা নিয়ে এর আগে মাননীয় সাংসদ, হিন্দু সংঠনের নেতা, সেবায়তসহ বৈঠক হয়েছিল। তখন তো সব ঠিকঠাক ছিল। সংঘাতের আশঙ্কার বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই।

একই প্রসঙ্গে বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আলাপ হয়েছে। হিন্দু সংগঠনের নেতাদের স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। উপজেলা প্রশাসনে অনুলিপি পাঠালেও তা আমি এখনও পাইনি।

তিনি বলেন, মহালয়ার দিন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তো আমাদের কিছু করার নেই। তবে এ দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো শঙ্কা দেখা দিলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিব।

ডিখ/পূজন সেন/প্রিন্স